কূপ একটাই। কিন্তু দু’পাশে দু’রকম পানি। একপাশের পানিতে ক্রমাগত বুঁদ বুঁদ উঠছে আর বেশ ঠান্ডা। অন্যপাশের পানি নিয়েই যত চাঞ্চল্য, দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। গরমের কারণে কাছে দাঁড়ানো মুশকিল। কিন্তু সেই জল হাতে নিলে আগুনের তাপ লাগেনা। বিষয়টা যেমন অবাক করার মতো, অনেকে আবার মজাও পান। কিন্তু প্রচলিত মিথগুলো শুনলে চমকে ওঠেন বেশিরভাগ মানুষই।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার মধ্যভাগে বাড়বকুণ্ড অবস্থিত। বাড়বকুণ্ড ট্রেইলে কয়েকশ’ বছরের পুরনো কালভৈরবী মন্দিরের ঠিক পাশেই এই অগ্নিকুণ্ডের অবস্থান। অনেকের মতে, হাজার বছরেরও পুরনো এটি। কিন্তু এই কূপের পানিতে আগুন জ্বলার কারণ খুঁজতে গিয়ে অনেক রকমের উত্তর মেলে। অনেকের মতে এটি অভিশপ্ত একটি কূপ, কেউ কেউ বলেন এটি প্রাকৃতিক কারণ।
জায়গাটি নিয়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় জনশ্রুতি হলো, প্রাচীনকালে এখানে দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে নর বলি দেয়া হতো। এভাবে চলতে চলতে একদিন এখানে আগুন ধরে যায়। অনেক চেষ্টার পরও এই আগুন নেভানো যায়নি। যুগ যুগ ধরে এটি যেন মৃত আগ্নেয়গিরির মুখ; যার ভেতর থেকে সর্বদা আগুন বের হচ্ছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতানুযায়ী, এটা ধর্মীয় আশীর্বাদ।
এখানে শত শত বছরের পুরনো বেশ কিছু মন্দির আছে। বিশেষ করে যেখানে আগুন জ্বলছে সেখানেই দু’টি শিব মূর্তিকালভৈরবী মন্দির। এগুলো দেখাশোনা করেন এক পূরহিত। তার মতে, শিব ও পার্বতী স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। পার্বতীর বাবা একদিন শিবকে অপমান করেন। পার্বতী তা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেন। শিব খবরটি পেয়ে রাগে পার্বতীকে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য শুরু করেন। এ কারণে তখন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল। শিবকে শান্ত করার জন্য ও পৃথিবীর ধ্বংস ঠেকাতে বিষ্ণু তার চক্র দিয়ে পার্বতীর শরীরকে ৫১ ভাগ করেন। ওই টুকরোগুলোর একটি ভাগ পড়েছে বাড়বকুণ্ডের এই জায়গায়।
তবে বিজ্ঞান বলছে অন্য কথা! যতদূর জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে এই পাহাড়ে মিথেন গ্যাসের সন্ধ্যান পাওয়া গিয়েছিল। কোনো এক কারণে সেসময় গ্যাস কূপের মুখ বন্ধ করে দেয়া হয় সীসা দিয়ে। তারপর থেকে এখানকার পানিতে আগুন জ্বলে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর পাশে দাঁড়ালে গা ছমছমে ব্যাপার কাজ করে! মনে হবে কোনো এক অভিশপ্ত জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন আপনি।
যেভাবে যাবেন
সীতাকুণ্ডের পরেই বাড়বকুণ্ড বাজার। প্রথমেই বাড়বকুণ্ড বাজারে যেতে হবে। সেখান থেকে হেঁটে কিংবা সিএনজিতে চড়ে পাকা রাস্তার শেষ পর্যন্ত যেতে হবে। সেখান থেকেই পাহাড়ি রাস্তা ধরে মন্দির পর্যন্ত যেতে হবে। অনেকে সিএনজির পথটা হেঁটেই যান। সকালের নাস্তা বাড়বকুন্ড বাজারেই সেরে নিতে পারেন। একইভাবে ফিরতে পারবেন।
সুত্র: ডেইলি বাংলাদেশ
পাঠকের মতামত